লিভার ক্যান্সার
লিভার মানুষের শরীরের অভ্যান্তরের সবচেয়ে বড় অর্গান বা অঙ্গ। এটি একটি ফুটবলের মত যার গড় ওজন প্রায় দেড় কেজি। লিভারের মধ্যে কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন হয়ে সেলের গঠন, প্রকৃতি, কার্যকলাপের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায় যাকে সাধারণ ভাবে টিউমার বলা হয়। এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন থেকেই ক্যান্সারের সূত্রপাত হয়। তবে অন্য অঙ্গের ক্যান্সার ছড়িয়ে অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়।
প্রকারভেদঃ
- হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (এটাই প্রধান লিভার ক্যান্সার) ।
- ইন্ট্রাহেপাটিক কোলাঞ্জিও কার্সিনোমা।
- হেপাটোব্লাস্টোমা।
লিভার ক্যান্সারের স্টেজঃ
লিভার ক্যান্সারের প্রধানত ৪ টি স্টেজ থাকে—
- ১। যখন লিভারে ১টি মাত্র টিউমার থাকে।
- ২। যখন ২ বা ততোধিক টিউমার থাকে অথবা একটা টিউমার থাকে যা পার্শ্ববর্তী রক্তনালীতে ছড়িয়ে পরে।
- ৩। যখন একটির বেশি টিউমার থাকে যা ৫ সেন্টিমিটারের বেশি হয় অথবা ক্যান্সার পার্শ্ববর্তী কোনো অঙ্গে বা লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পরে।
- ৪। যখন টিউমার শরীরের অন্যান্য অর্গানে ছড়িয়ে পরে যেমন হাড়, ফুসফুস ইত্যাদি ।
লিভার ক্যান্সারের কারণঃ
যখন লিভারের কোষগুলোর ডিএনএ তে পরিবর্তন হয় (মিউটেশন) তখনই শরীরের কেমিকেল প্রসেসে ব্যাঘাত ঘটে যার ফলে অস্বাভাকি কোষবৃদ্ধি হয়ে থাকে (টিউমার) এবং সেখান থেকেই ক্যান্সার হয়। যে সকল ফ্যাক্টর এর জন্য দায়ী, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
- হেপাটাইটিস বি বা সি দ্বরা অনেক দিন ধরে লিভার আক্রান্ত থাকলে
- লিভার সিরোসিস নামক রোগে আক্রান্ত থাকলে
- বংশগত ভাবে অর্জিত লিভারের কোনো রোগ থাকলে
- ডায়াবেটিস থাকলে
- ফ্যাটি লিভারের কারণে
- অতিরিক্ত এলকোহল ও মাদকদ্রব্য সেবনে।
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহঃ
লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক স্টেজে বেশিরভাগ রোগীর মধ্যেই বিশেষ কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না, তবে পরবর্তীতে যে সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পায় তার মধ্যে থাকে…
- ক্ষুধামন্দা (অরুচি)
- কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমতে থাকা
- উপরের পেটে ব্যাথা অনুভব করা
- বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
- সাধারণ দুর্বলাতা ও অবসাদ
- পেট ফুলে যাওয়া
- ত্বক এবং চোখের কঞ্জাংটিভা হলুদ হয়ে যাওয়া
- ফ্যাকাশে পায়খানা হওয়া
উপরের যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এবং তা যদি ২ দিনের বেশি থাকে তাহলে ডাক্তারের সরণাপন্ন হতে হবে।
লিভার ক্যান্সারের রোগ নির্ণয়ঃ (টেস্ট)
লিভারের রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারনত যে পরীক্ষা গুলো করা হয় তার মধ্যে
- Blood tests
- USG of liver
- CT scan/MRI of liver
- Liver tissue biopsy
এছাড়া ক্যান্সারের বিভিন্ন অঙ্গে মেটাস্টেসিস (স্টেজ/ ছড়ানো) নির্নয়ের জন্য আর কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতেপারে।
লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধঃ
লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য যা করতে হবেঃ
১। লিভার সিরোসিস থেকে বাচার জন্য প্রধাণত যা করতে হবেঃ
- এলকোহল ও যেকোন মাদক দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে
- অতিরিক্ত ওজন কমাতে সর্বদা পরিমিত পরিমাণ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধের জন্য ভ্যাক্সিন দিয়ে রাখতে হবে।
২) হেপাটাইটিস সি থেকে বাচার জন্যঃ
- সেক্সুয়াল রিলেশানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- ইঞ্জেকশান নেওয়ার ক্ষেত্রে ইনটেক নিডেল ব্যবহার করতে হবে।
- বিভিন্ন প্রকার ট্যাটু করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এছাড়া হেপাটাইটিস এ, বি, সি তে যাতে আক্রান্ত না হন সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
প্রাথমিক লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে মূলত ক্যান্সারের স্টেজ/ এক্সটেন্ট (কতটুক ছড়িয়েছে) এর উপর, সাথে রোগীর বয়স ও সার্বিক স্বাস্থের কথা বিবেচনা করে।
সার্জারীঃ
প্রধান চিকিৎসা অপারেশন। অপারেশনের মাধ্যমে লিভারের ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ (টিউমার) কেটে ফেলা। এর সাথে
- কেমোথেরাপি।
- রেডিওথেরাপি।
- এলকোহল ইঞ্জেকশান (লিভার টিউমারে)।
- ফ্রিজিং (ক্রায়োএব্লাশন) ক্যান্সার সেল।
- ইমিউনোথেরাপি।
- সাপোর্টিভ (প্যালিয়েটিভ) কেয়ার সহ বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা—
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করার পূর্বে অবশ্যই ক্যান্সারের স্টেজ, প্রোগ্নোসিস বুঝে নিয়ে চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। লিভার ক্যান্সার মেটাস্টেসিস (ক্যান্সার ছড়িয়ে পরা), রোগীর সার্বোদৈহিক লক্ষণ কিরুপ এসকল বিষয় বিবেচনা করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হলে লিভার ক্যান্সারের অনেক রোগীই সাময়িক থেকে অনেক বছর পর্যন্ত সুস্থ জীবন অতিবাহিত করতে পারেন।
লিভারের যে কোন রোগ দেখা দিলেই দেড়ি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।