ফুসফুস ক্যান্সার কাদের বেশি হয়, কারণ, লক্ষণ, প্রকারভেদ ও চিকিৎসা
মানুষের ফুসফুস দুটি স্পঞ্জি অঙ্গ যা বুকের মধ্যে অবস্থান করে শ্বাসকার্য পরিচালনা করে, শ্বাস গ্রহনের সময় এটি অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং ছাড়ার সময় কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে।
এই অঙ্গ দুটিতে ক্যান্সার হওয়াকেই ফুসফুস ক্যান্সার বলে। প্রতি বছর যত ক্যান্সার রোগী মারা যায় তার মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রকারঃ
ডাক্তারগণ ফুসফুস ক্যান্সারকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করেছেন…
১। স্মল সেল লাং ক্যান্সার (যারা অতিরিক্ত ধুমপানে অভ্যস্ত তাদের হয়ে থাকে)
২। নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, এডিনোকার্সিনোমা ইত্যাদি।
ঝুকিপূর্ন ফ্যাক্টরঃ (যা থেকে ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি)ধুমপান এবং ধুমপায়ীর আশেপাশে যারা থাকে।
- পরিবারে বা বংশে কারো ফুসফুস ক্যান্সার থেকে থাকলে।
- এসবেস্টস বা বিভিন্ন কার্সিনোজেন এক্সপোজার (আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল ইত্যাদির সংস্পর্শ বা শ্বাস নেওয়া)।
- রেডিয়াম গ্যাস এক্সপোজার ইত্যাদি।
ফুসফুস ক্যান্সারের কারণঃ
- ধুমপান
- মদ্যপান
- অন্যন্য নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন ইত্যাদি
ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণঃ
প্রাথমিক ভাবে কোনো লক্ষণ প্রকাশিত না হলেও পরবর্তিতে যে লক্ষনগুলো দেখা দেয় তাহলঃ
- ক্রমাগত কাশি, যেটা কোন ভাবেই ভালো হচ্ছে না।
- কাশির সাথে রক্ত আসা, যত কম রক্তই হোক।
- শ্বাস প্রশ্বাস ছোট হয়ে যাওয়া।
- বুকে ব্যাথা।
- স্বরভং/গলাভাঙ্গা।
- ওজন কমতে থাকা।
- হাড়া ব্যাথা ও মাথায় ব্যাথা।
- গাইনেকোমেস্টিয়া বা পুরুষদের স্তন বড় হতে থাকা।
ফুসফুস ক্যান্সারের জটিলতাঃ
ফুসফুস ক্যান্সার হলে যে সমস্ত জটিলতা দেখা দিতে পারে তা হলো……
- শ্বাস প্রাশ্বাস ছোট/ঘনঘন হওয়া।
- কাশির সাথে নিয়মিত রক্ত ওঠা।
- বুকে ব্যাথা
- বুকে পানি জমা (প্লু্রাল ইফিউশান)
- বুক থেকে ক্যান্সার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরা।
ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধঃ
- যে সকল কারনে ক্যান্সার হয় এবং যে সকল বস্তু ফুসফুস ক্যান্সার তৈরী করে তা থেকে সর্বদা দূরে থাকা ও সাবধানতা অবলম্বল করা।
- তাজা ফলমুল ও শাকসবজি বেশি খাওয়া।
- নিয়মিত শারিরিক ব্যায়াম করা।
- খোলা ও পরিস্কার বায়ুতে বুক ভরে মুখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিয়ে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়া, এভাবে প্রতিদিন সকালে কয়েকবার করা।
ফুসফুস ক্যান্সারের পরীক্ষা নিরীক্ষাঃ
ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য যে সকল পরীক্ষা করা হয় তার মধ্যে……
- Chest X-ray
- CT scan of Chest
- Sputum cytology
- Bronchoscopy
- Tissue biopsy সহ আরো অনেক পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় সাধারণত ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য অপারেশন করে আক্রান্ত অংশটুক কেটে ফেলা হয়। যে অপারেশন করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- Wedge resection
- Segmental resection
- Lobectomy
- Pneumonectomy
এছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, রেডিওসার্জারী, টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহ বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা করা হয়।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা-
হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সারের জন্য কিছু ইফেক্টিভ প্যালিয়েটিভ ট্রিটমেন্ট রয়েছে। ক্যান্সারের যে কোন স্টেজে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নেওয়া যায়, তবে মেটাস্টেসিস পর্যায়ে প্যালিয়েশন দেওয়া কঠিন একটা কাজ হলেও হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফুসফুসের ক্যান্সারে যথা সময়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিলে ক্যান্সারের রোগী অনেক দিন পর্যন্ত কষ্ঠহীন জীবন লাভ করে থাকে।