জরায়ুর ক্যান্সার- একটি আতঙ্কের নাম
বর্তমানে সারা বিশ্বের নারীদের কাছে জরায়ু ক্যান্সার একটি আতঙ্কের নাম। এই রোগের প্রকোপ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। যে কোনো বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। তবে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এক গবেষণার জরিপে জানা যায় যে, প্রতি বছর পৃথিবীতে শুধু জরায়ু ক্যান্সারেই আক্রান্ত হয় ২ লাখ ৫০ হাজার নারী। বাংলাদেশের ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের শতকরা ৩০ ভাগ নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।যদি আক্রান্ত নারীরা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করান তাহলে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫০% কমে যায়। আর প্রথম থেকেই চিকিৎসা করালে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ৯৫%
জরায়ু ক্যান্সারের কারণঃ
- জরায়ুর ক্যানসারের জন্য মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দায়ী। এই ভাইরাস সহবাসের মাধ্যমে ছড়ায়।
- অল্প বয়সে বিয়ে হলে এবং পাঁচ বছরের বেশি সময়কাল ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলে জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ২০ বছরের নিচের বয়সী কোনো নারী গর্ভধারণ করলেও হতে পারে।
- বহু পুরুষ গামিতা এ রোগের অন্যতম একটি কারণ।
- যৌনাঙ্গ অপরিচ্ছন্ন রাখলে জরায়ু ক্যানসার হতে পারে।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণঃ
জরায়ু ক্যান্সারকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা হয়ে থাকে। কারণ, এই অসুখ দেখা দিলে অনেক নারীরাই এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না বা লক্ষণ দেখা দিলেও বিশেষ গুরুত্ব দেন না।
জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক কিছু লক্ষণঃ
- নিম্নাঙ্গের চারপাশে চাপ অনুভব করা কিংবা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা।
- গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি মনে হওয়া, পেটে অস্বস্তি বোধ করা ইত্যাদি পেটের কোন সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
- পেটে অতিরিক্ত ব্যাথার কিংবা পেট ফুলে থাকা।
- সারাক্ষণ বমি বমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া।
- আচমকা ক্ষুধা কমে যাওয়া।
- অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা হঠাৎ করে ওজন অনেক কমে যাওয়া।
- যৌনমিলনের সময় ব্যাথা অনুভব হওয়া।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করা।
- নারীদের মেনোপোজ হওয়ার পরেও মাসিক বা ব্লিডিং হওয়া।
জরায়ুর ক্যান্সার শনাক্তকরণ পরীক্ষাঃ
জরায়ুর মুখে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিনিং টেস্ট (sceening test) রয়েছে। যেমন প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট (Pap smear) ও ভিজুয়াল ইন্সপেকসন অফ এসিটিক এসিড টেস্ট (ভিআইএ বা VIA) টেস্ট।এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ভি আই এ (VIA) পরীক্ষাটকেই সর্বসাধারণের জন্য স্ক্রিনিং টেস্ট (sceening test) হিসাবে নির্ধারণ করেছে। এর কারন হচ্ছে ভিআইএ টেস্ট (VIA test) অতি সহজেই ও স্বল্পমূল্যে করা সম্ভব। সকল সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করানোর সুযোগ রয়েছে।
জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়ঃ
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য এখন টিকা পাওয়া যায়। মেয়েদের বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর তখন তিনটি ডোজে ছয় মাসের মধ্যে এই টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা মূলত বিয়ের পূর্বে অথবা যৌন সক্রিয় হওয়ার আগে দেওয়া উচিত। এছাড়াও নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- টিকা প্রদান করে অবিবাহিত মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার থেকে নিরাপদ রাখা।
- কোন লক্ষণ চোখে পড়লেই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
- জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত নারীদের বছরে একবার করে পরীক্ষা করা উচিত। তবে পর পর দুইবার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে ৩ অথবা ৫ বছর পরপর পুনরায় পরীক্ষা করাবেন। ঝুঁকিপূর্ণ নারীরা ৩ বছর পর পর পরীক্ষা করাবেন।
জরায়ুর ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
প্রচলিত চিকিৎসা মতেঃ
- হিস্টেরেকটমি বা জরায়ুর আক্রান্তস্থান বা জরায়ু কেটে ফেলা।
- কেমোথেরাপী।
- রেডিওথেরাপী।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
রোগীর লক্ষণ ও ক্যান্সারের প্রবলতার উপর নির্ভর করে এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার নিয়মনীতি অবলম্বন করে সুনির্দিষ্ট ওষুধ নির্বাচন এবং ওষুধের শক্তি ও মাত্রা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে রোগী উপশম লাভ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগী স্থায়ীভাবে আরোগ্যলাভ করে থাকে। জরায়ুর ক্যান্সারে হোমিওপ্যাথিতে প্রায় ৯১ টির বেশি ওষুধ রয়েছে। তাই জরায়ু সংক্রান্ত যে কোন রোগ দেখা দিলেই দেরী না করে একজন উচ্চতর ডিগ্রীপ্রাপ্ত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।