স্তন ক্যান্সার (breast cancer)
নারীদের যে সকল ক্যান্সার হয়ে থাকে তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার এখন খুব সাধারন । আধুনিকতার ছোয়ায়, অনিয়মিত জীবন যাপন, বিয়ে ও সন্তান গ্রহণের (জন্ম নিয়ন্ত্রন) ব্যাপারে নারীদের অসাবধানতা ইত্যাদি কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে স্তন ক্যান্সার।
স্তন ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ
স্তনে বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সার হতে পারে, যেমন…
- এনজিওসার্কোমা
- ডাক্টাল কার্সিনোমা ইন সিতু
- প্রদাহিক স্তন ক্যান্সার
- ইনভেসিভ লোবিউলার কার্সিনোমা
- লোবিউলার কার্সিনোমা ইন সিতু
- পুরুষের স্তন ক্যান্সার
- প্যাজেটস ডিজিস অফ ব্রেস্ট
- রিকারেন্ট ব্রেস্ট ক্যান্সার
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহঃ
- স্তনে অস্বাভাবিক গোটা (টিউমারের মতো ফুলে ওঠা) বা ফোলাভাব।
- স্তনের আকার আকৃতি ও স্বাভাবিকতার পরিবর্তন ঘটা।
- স্তনের উপরের ত্বকে ভাজ/গর্ত/বসে যাওয়া।
- স্তনের বোটা বসে যাওয়া।
- স্তনের বোটার পাশে অথবা চারিদিকে চামড়া/ত্বক ছিলে যাওয়া, উঠে যাওয়া, মামড়ি পড়া বা গোটার মত কোন অংশ তৈরী হওয়া।
- স্তনের ত্বকের উপর গর্ত তৈরী হয়ে কমলা লেবুর আকৃতি ধারণ করা ও লালচে ভাব হওয়া।
কখন বুঝবেন যে ডাক্তার দেখাতে হবে ?
যখনই স্তনের উপর কোনো গোটা বা অস্বাভাবিকতা দেখা দিবে তখনই ডাক্তারের সরণাপন্ন হতে হবে।
কেন এবং কাদের স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশিঃ
- প্রথমত মহিলাদেরই বেশি হয়ে থাকে তবে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষেরও স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে।
- যাদের বয়স বেশি, কারণ বয়স বারার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুকিও বাড়তে থাকে।
- যাদের বংশে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস আছে।
- বংশগত ইনহেরিটেড জিনের কারণে (বি এর সি এ ১, বি এর সি এ ২ ) স্তন ক্যান্সারের ঝুকি বাড়তে পারে।
- অতিরিক্ত রেডিয়েশনের (এক্সরে ইত্যাদি) কারণে।
- অতিরিক্ত মেদভূরি জমার কারণে।
- নির্ধারিত বয়সের অনেক আগেই পিরিয়ড শুরু হলে।
- অনেক দেড়িতে বিয়ে এবং বাচ্চা বেশি বয়সে হলে।
- মেনোপজের (মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া) পরে হরমোন থেরাপি দিলে।
- মাদকাসক্ত থাকলে।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধঃ
দৈনন্দিন জীবন ধারায় কিছু পরিবর্তন ও নিয়ম কানুন মেনে চললেই স্তন ক্যান্সারের ঝুকি অনেকটা কমে যায়। যার মধ্যে রয়েছেঃ
- নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মত চলা।
- নিজে নিজে কয়েকদিন পরপর স্তন পরীক্ষা করা এবং কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করলেই ডাক্তরের স্বরণাপন্ন হওয়া।
- ধুমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা।
- শারিরীক ব্যায়াম করা।
- ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করা।
- স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া
- বিয়ে করতে দেরি না করা (২৫ বছরের পূর্বে)।
স্তন ক্যান্সার ডায়াগনোসিসঃ (রোগ নির্ণয়)
স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করতে যে সকল পরীক্ষা করা হয়, এর মধ্যে>>>
- স্তন ও পাশ্ববর্তী লিম্ফ নোড পরীক্ষা করা,
- ম্যামোগ্রাম
- স্তনের আল্ট্রাসনোগ্রাফী
- FNAC / Biopsy (স্তন থেকে টিস্যু নিয়ে) করা। এটাই স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা।
- এছাড়া স্তন ক্যান্সারের স্টেজ নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন প্রকার রক্ত পরীক্ষা সহ অন্যান্য পরীক্ষা দরকার হতে পারে।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসা—
সাধারনত স্তন ক্যান্সার হলে যেই অংশে ক্যান্সার ধরা পরে সেই অংশটুক কেটে ফেলা হয় (লাম্পেকটোমি) বা পুরো স্তন কেটে ফেলা (ম্যস্টেকটোমি) বা আক্রান্ত লিম্ফ নোড অপসারন করা, এছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইত্যাদি চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা—
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করার পূর্বে অবশ্যই ক্যান্সারের স্টেজ, প্রোগ্নোসিস বুঝে নিয়ে চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ক্যান্সারের সাথে কতটুক লিম্ফ নোড, অন্যান্য অর্গান মেটাস্টেসিস (ক্যান্সার ছড়িয়ে পরা) হয়েছে, রোগীর সার্বোদৈহিক লক্ষণ কিরুপ এসকল বিষয় বিবেচনা করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হলে স্তন ক্যান্সারের অনেক রোগীই সাময়িক থেকে অনেক বছর পর্যন্ত সুস্থ জীবন অতিবাহিত করতে পারেন, অনেক ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করে থাকেন।
স্তনের যে কোন রোগ দেখা দিলেই দেরী না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।