logo
For any kinds of physical problem contact with us or visit at our chamber.
+8801816566944
info@drsofiqul.com
70/B, East Panthpath, Dhaka
Instagram Feed
Site Statistics
Search

ত্বকের(Skin) ক্যান্সার

ত্বকের কোষ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে ত্বকের ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। এটি বর্তমান সময়ে খুব পরিচিত একটি রোগে পরিণত হয়েছে।

Mona Ghora নামে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের মতে, প্রায় ৯০% স্কিন ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। স্কিন ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে সবচেযে বেশি স্কিন ক্যান্সার হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাজ্যে যা ক্যান্সার রোগের মধ্যে ৫%। তবে বাংলাদেশেও ত্বকের ক্যান্সার এর পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর অন্যতম কারন হচ্ছে পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

শরীরের যে সব অংশ উন্মুক্ত থাকে, যেমন- মুখ, গলা, হাত ও পিঠ ইত্যাদি অংশে সাধারণত এই ক্যান্সার হয় এবং এই উন্মুক্ত ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার হার প্রায় ৮১.১%। তবে শরীরের যেসব অংশ ঢাকা থাকে ও সূর্যের আলো পৌঁছায় না সে সব জায়গায়ও এ ক্যান্সার হতে পারে। সাধারণত ৩০-৫১ বছর বয়সে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আর পুরুষ ও মহিলাদের স্কিন ক্যান্সার এর অনুপাত ২:১।

 ত্বকের ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ

ত্বকে প্রধানত ৩ প্রকারের ক্যান্সার হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • বেসাল সেল কার্সিনোমা (Basal cell carcinoma): ত্বকের বেসাল সেলের (এপিডার্মিসের গভীরের স্তর) অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হলো বেসাল সেল কার্সিনোমা। এর ফলে ত্বকে ক্ষতের ন্যায় দাগের সৃষ্টি হয় এবং লাল বা গোলাপী বর্ণের ছোপ দেখা দেয়। এটি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে ঘাড়, বাহু, মুখ ও হাতে অর্থাৎ যে সব স্থানে সূর্যের আলো বেশি লেগে থাকে। এটি সাধারণত সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে হয়ে থাকে।
  • স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা (Squamous cell carcinoma): প্রায় ২০ শতাংশ ত্বকের ক্যান্সার হলো স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা। সাধারণত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্যগুলো বেসাল সেল কার্সিনোমার মত হয়ে থাকে। এই ক্যান্সার খুব কমই শরীরের অন্যান্য অংশের ক্ষতি করে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমার দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এটি সাধারণত মুখ গহ্বরের ভিতরে, ঠোটে এবং গোপনাঙ্গের কাছা কাছি জায়গায় হয়ে থাকে।
  • মেলানোমা (Melanoma): এটি মারাত্বক অবস্থা সাধারণত আঁচিল থেকে হয়ে থাকে।

এছাড়া ত্বকের অন্যান্য ক্যান্সারগুলো হলো মার্কেল সেল কার্সিনোমা (Merkel cell carcinoma), এটিপিক্যাল ফাইব্রোক্সেন্থোমা (atypical fibroxanthoma), কিউটেনাস লিম্ফোমা (cutaneous lymphoma) এবং ডার্মাটোফাইব্রোসারকোমা (dermatofibrosarcoma)

ত্বক ক্যান্সারের কারণঃ

  • ফর্সা ত্বক, বিশেষ করে যারা স্বর্ন কেশী বা লাল চুলের অধিকারী।
  • পূর্ব পুরুষ বা রক্ত সম্পর্কীয় কারো যদি ত্বকের ক্যান্সার থাকে।
  • দীর্ঘ দিনের পুরানো তিল যদি তার বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে যেমন: আকারে বড় হতে থাকে, রং ও মসৃণতার পরিবর্তন, এলোমেলো সীমানা এবং আঁচিল থেকে রক্ত ও রস নি:সরণ।
  • সূর্যের আলো বা আল্ট্রাভায়ালেট রশ্মিতে বেশিক্ষণ থাকলে।
  • দীর্ঘ দিনের অবহেলিত ত্বকের ঘা, পোড়া , ক্ষত ও চর্মের যক্ষা ইত্যাদি ক্যান্সার হতে পারে।
  • ভাইরাস ইনফেকশন: হিউমেন প্যাপিলোমা ভাইরাস ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে যাদের বেশি বেশি এক্সরে করতে হয় এবং যারা এক্সরে বা রেডিয়েশন রুমে বেশিক্ষণ কাজ করে থাকে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয় এমন কোন রোগে আক্রান্ত হলে, যেমন: Lymphoma, HIV
  • অতিরিক্ত পুড়ে যাওয়া স্কিন থেকে।
  • দীর্ঘ দিন মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করলে ত্বকের বা অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সার হয়।
  • কোন স্থানের রোদ যত করা সেই স্থানের বাসিন্দাদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা তত বেশি।
  • কিছু জন্মগত বা বংশগত চর্মরোগ, যেমন: জোনোডার্মা পিগ্নেন্টোসা।

 ত্বক ক্যান্সারের লক্ষণঃ

  • শরীরের আঁচিলের রং বদলাতে থাকে এবং তা ধীরে ধীরে বাদামী বর্ণের হয় আঁচিলের আকৃতি দিন দিন বড় হতে থাকে এবং আঁচিল থেকে রক্ত পাত হয় ও ব্যাথা লাগে।
  • স্কিনের উপর কালো কালো ছোপ ছোপ দাগের মতো পরে, ত্বকে ফুসকরী উঠে এবং তা সহজে ভালো হতে চায় না।
  • ত্বকের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের সাথে সাথে রক্তস্রাব।
  • ত্বকের উপরিভাগ শুষ্ক ও খস খসে হয়ে যাওয়া এবং অনেক সময় তরল জাতীয় কিছু নির্গমণ হওয়া।
  • মুখের ভিতরে ঘা যা সহজে ভালো না হওয়া।
  • হাত ও পায়ের স্ক্রিনে অতিরিক্ত শুস্কতা, যা লোশন বা ক্রিমে কাজ হয় না।
  • ত্বকে বিভিন্ন বর্ণের সংমিশ্রন দেখা দেয়, যেমন: বাদামী, কালো, লাল, সাদা ও নীল ইত্যাদি।
  • ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভব করা।

 ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ঃ

যে সকল কারণে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে সেগুলো হলো:

  • ফর্সা ত্বকে খুব সহজে সানবার্ন হতে পারে। তাই ফর্সা ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • পূর্বে যে কোনো বয়সে সানবার্ন হয়ে থাকলে পরবর্তীতে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • দিনের বেলায় বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকলে, বিশেষ করে সূর্যের আলোতে কাজ করার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে এ ক্যান্সার হতে পারে।
  • উষ্ণ ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় বসবাসের কারণে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে ত্বকে এমন কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো এ সমস্যা থাকলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • পূর্বে কখনও ত্বকে ক্যান্সার হলে পরবর্তীতে তা আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • শারীরিক অসুস্থতার জন্য দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • রেডিয়েশনের সংস্পর্শে বেশি থাকলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পদার্থ যেমন আর্সেনিকের কারণেও এ রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

 প্রতিরোধঃ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিম্নের নিয়মগুলো মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়:

  • দিনের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ দুপুরবেলায় সূর্যালোক এড়িয়ে চলতে হবে।
  • সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
  • সূর্যের আলো প্রতিরোধের জন্য ফুলহাতা কাপড় পরতে হবে।
  • ট্যানিং বেড ব্যবহার করা যাবে না।
  • sun-sensitizing ক্রিম বা ঔষধ এড়িয়ে চলে হবে।
  • ত্বকে যে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ত্বকের ক্যান্সার হয়েছে কিনা যেভাবে নিশ্চিত হবেনঃ

  • হাতের করতল, আঙ্গুল, বাহু ইত্যাদির চামড়া পরীক্ষা করতে কনুই ভাঁজ করে নিজেই দেখতে হবে যে উপরের কোনো লক্ষণ দেখা যায় কিনা।
  • শরীরের বহির্ভাগ যেমন- মুখ, গলা, বুক, পেট ইত্যাদির ত্বক পরীক্ষা করা।
  • আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শরীরের পেছনের অংশের চামড়াও পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কারো সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
  • চিরুনি দিয়ে আঁচড়াবার সময় লক্ষ্য করতে হবে মাথার ত্বকে অস্বাভাবিক কোনো কিছু অনুভূত হয় কিনা।
  • পা, পায়ের পাতা, আঙুল ইত্যাদিওপরীক্ষা করতে হবে। ত্বকে অস্বাভাবিক কোনকিছু লক্ষ্য করা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষাঃ

চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:

  • এক্সিশন (Excision)
  • ক্রাইয়োথেরাপি (Cryotherapy)
  • স্কিন বায়োপসি (Skin Biopsy)
  • ফটোকেমোথেরাপি (Photochemotherapy)

চিকিৎসাঃ

স্কিন বা ত্বকের ক্যান্সার চিকিৎসা এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি উভয় পদ্ধতিতে করা সম্ভব। তবে এলোপ্যাথিতে সাধারণত সার্জারী করে থাকে এর পর কেমোথেরাপী এবং রেডিওথেরাপীর মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া বর্তমানে সূক্ষ্ম আক্রমণকারী থেরাপি দেওয়া হয় যা ট্র্যাডিশনাল সার্জারি এবং কেমোথেরাপির ঘাটতিগুলো পূরণ করে। এই থেরাপি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার পাশাপাশি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয় এবং পুনরায় ক্যান্সার ফিরে আসাকে প্রতিরোধ করে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি সার্জারির জটিলতা মুক্ত এবং কোনো ধরনের রক্তপাত নেই।

অপরদিকে হোমিওপ্যাথিতে রোগীর লক্ষন এর উপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। বিভিন্ন লক্ষণ সাপেক্ষে ত্বকের ক্যান্সারের উপর হোমিওপ্যাথিতে প্রায় ৫৯ টির মতো ওষুধ রয়েছে। ক্যান্সারের প্রাবল্যতা ও আনুসঙ্গিক রোগলক্ষণের উপর নির্ভর করে একজন অভিজ্ঞ ও উচ্চশিক্ষিত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুনির্দিষ্টভাবে ওষুধ এবং তার মাত্রা ও শক্তি নির্বাচন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে রোগী কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীনভাবে উপশম লাভ করে এবং অনেকক্ষেত্রে আরোগ্যলাভ করে থাকেন। তাই ত্বক সংক্রান্ত যেকোন লক্ষন বা অস্বাভাবিকতা দেখা দেওয়া মাত্রই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন।

 

Leave a Comment