ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ ও প্রতিকার

Table of Contents
ঘন ঘন প্রস্রাব বর্তমানে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের অসুবিধা তখনই হয়, যখন হঠাৎ মূত্রস্থলী সংকুচিত হতে সুরু করে অথবা যখন সংকুচিত হওয়া উচিত তখন না হয়ে অত্যাধিক প্রস্রাবে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, যার প্রবল চাপে অনিচ্ছাসত্বেও মূত্র বেরিয়ে আসে। এছাড়া মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশী ঠিকমতো তার কাজ না করলেও এই সমস্যা হতে পারে। দিনে ৪-৫ বার প্রস্রাব আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার থেকে বেশিবার প্রস্রাব হলে সেটা চিন্তার বিষয়। দিনে ৮-৯ বারের বেশি প্রস্রাব হলে এবং রাতে যদি নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণঃ –
১। অনেকে মনে করে থাকেন ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া মানেই ডায়াবেটিস, বিষয়টি কিন্তু তাও নয়। এর পেছনে যেমন ডায়বেটিস থাকতে পারে তেমনি আরো বহু কারণ থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্লাডার যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করা শুরু করে তাহলেই অতিরিক্ত প্রস্রাবের চাপ আসে। আর এরকমটা নানা কারণে হতে পারে যেমন: অ্যালকোহল সেবন, ক্যাফিন, ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন (Urinary Tract Infection (UTI), পেলভিক রিজিয়ানে কোন অসুবিধা, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রয়া থেকেও হতে পারে।
২। যুবকদের পর্ণ দেখা বা উত্তেজক চিন্তা।
৩। শীতকাল বা ঠান্ডা-শুষ্ক পরিবেশে মানুষের শরীর ঘামে না, ঐ সময় অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি করে কিডনী শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়, যেমন – ডায়াবেটিস, প্রস্টেট গ্রন্থির টিউমার, প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি।-কিডনী অকেজো হবার অন্যতম লক্ষণ হল অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া।-ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর হলে।
৪। মূত্র নালীর সংকোচন হলে এ সমস্যা হতে পারে হতে পারে।
৫। এছাড়া এলকোহল, চা, কফি পান করাও অতিরিক্ত প্রস্রাব হবার জন্য দায়ী।
৬। ইনফেক্শন একটি কারণ। এটি হলে প্রস্রাবের সাথে জ্বালাপোড়া হবে। প্রস্রাব ছাড়াও জ্বালাপোড়া হবে। মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পেলভিক এরিয়াতে বা তলপেটে জ্বালাপোড়া করছে।
৭। পুরুষদের প্রোস্টেটে ইনফেকশন।
৮।প্রস্রাবের পথে যদি কোন বাধা থাকে তাহলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
৯। মেয়েদের গর্ভে সন্তান আসার প্রথম ৩ মাসে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। মেয়েদের পেলভিক ইনফ্লামেশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। যক্ষা বা TB হলেও তলপেটে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং অতিরিক্ত প্রস্রাব হতে পারে।
১০। প্রস্রাবের থলিতে ক্যান্সার হলেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং অতিরিক্ত প্রস্রাব হতে পারে, এমনকি রক্তও বের হতে পারে।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার লক্ষন-
– প্রস্রাবের প্রচণ্ড চাপ অনুভব।
-প্রস্রাবের সময় ব্যাথা, জ্বালাপোড়া ও অসহ্য অনুভূতি।
-তল পেটে স্বাভাবিকভাবে অথবা চাপ দিলে ব্যাথা অনুভব।
-ঘন ফেনার মত অথবা দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব।
-জ্বর-কাঁপুনিসহ অথবা কাঁপুনি ছাড়া।
-বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।
-কোমরের পাশের দিকে অথবা পিছনে মাঝামাঝি অংশে ব্যাথা।
-প্রস্রাবের চাপে রাতে বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার চিকিৎসা ও প্রতিকারঃ
প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ করা ব্যক্তিরা ৫ লিটার পানি খেলে হয়ত ২ লিটার প্রস্রাব হবে। বিশ্রামে থাকেন বা ঘামেন না তারা ২.৫ লিটার খেলেই ২ লিটার প্রস্রাব হতে পারে তবে এক সাথে ১ গ্লাসের বেশি পানি পান করার দরকার নেই। তবে এর ব্যতিক্রম হলেই চিন্তার বিষয়। কি কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা হচ্ছে সেটি বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রপার হোমিও চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন, প্রোস্টেটে ইনফেকশন, ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর, মূত্র নালীর সংকোচন ইত্যাদি যে কারণই দায়ী থাকুক না কেন সেটি যথাযথ ভাবে নির্ণয় করে প্রপার হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট নিলে ধীরে ধীরে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
————————————————————————–
ডাঃ মোঃ শফিকুল আলম
বিএইচএমএস (ঢা বি), এম ডি (এ এম), পিএইচডি (ভারত)
সাবেক অধ্যক্ষ-কাম-অধীক্ষক (দাঃপ্রাঃ)
সহযোগী অধ্যাপক- মেডিসিন বিভাগ
ইনচার্জ- পুরুষ ওয়ার্ড,
সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর-১৪, ঢাকা।
যে কোন তথ্য ও পরামর্শের জন্যঃ 01712-796505
সিরিয়ালের জন্যঃ 01816-566944
Sorry, the comment form is closed at this time.