ক্রণিক কিডনি রোগ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
ক্রণিক কিডনি রোগ এর কারণ
কিডনির ক্রনিক রোগের মধ্যের দুই তৃতীয়াংশের মূল দুটো কারণ হল ডায়াবেটিস এবং হাই ব্লাড প্রেশার। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া থেকে ডায়াবেটিস হয়, যা কিডনি, হৃৎপিণ্ড, রক্তনালী, স্নায়ু এবং চোখ সহ শরীরের প্রায় সব অঙ্গের ক্ষতি করে। রক্ত, রক্তনালীর প্রাচীরে বিরুদ্ধ চাপ সৃষ্টি করলে হাই ব্লাড প্রেশার বা হাইপারটেনশান হয়। ঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা হলে হাই ব্লাড প্রেশার থেকে ভবিষ্যতে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির ক্রনিক রোগ হয়। আবার, কিডনির ক্রনিক রোগ থেকেও হাই ব্লাড প্রেশার হতে পারে।
- গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসঃ এটা হল একপ্রকার রোগের সমষ্টি, যা থেকে কিডনির ছাঁকনিতে জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে ক্ষয় হয়। কিডনির রোগের এটা তৃতীয় মুখ্য প্রচলিত কারণ।
- বিকলাঙ্গতাঃ মাতৃগর্ভে বাচ্চা বেড়ে ওঠার সময়েই এটা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যাবার রাস্তা ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে গিয়ে হয়ত কম পরিমাণ মুত্র বেরোয় এবং এর ফলে মুত্র কিডনিতে ফেরত আসে। এটা থেকে সংক্রমণ হয় এবং আস্তে আস্তে কিডনির ক্ষতি হয়।
- লুপাস এবং অন্যান্য রোগ কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
- পুরুষদের ওস্টিওপোরেসিস টিউমার, কিডনি স্টোন বা বেড়ে যাওয়া প্রোস্টেট গ্রন্থি থেকে হতে পারে, যা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
- কিডনিতে বার বার সংক্রমণ হলে।
ক্রণিক কিডনি রোগ এর লক্ষণ
- এনার্জি কমে যাবার সাথে সাথে ক্লান্ত লাগা।
- মনঃসংযোগে সমস্যা।
- খাবারে অনীহা।
- ঘুমে ব্যাঘাত।
- রাতে পেশীতে খিঁচুনি।
- পা এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া।
- সকালবেলায় চোখের আশপাশ ফুলে যাওয়া।
- শুষ্ক এবং ফাটা ত্বক।
- বার বা মূত্রত্যাগের বেগ, বিশেষকরে রাতে।
- হৃৎপিণ্ডের বাইরের আবরণে জল জমে গিয়ে বুকে ব্যথা।
- ফুসফুসে জল জমে গিয়ে নিঃশ্বাসের দুর্বলতা।
- হাই ব্লাড প্রেসার এবং এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
- গা গোলানো।
- বমি।
ক্রণিক কিডনি রোগ নির্ণয়
রোগীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাস ছাড়া কিডনি রোগ এর ডায়াগনসিস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। পরবর্তীক্ষেত্রে, ডাক্তার হৃৎপিণ্ড বা রক্তবাহী নালিতে হওয়া সমস্যার লক্ষণ পরীক্ষার জন্য, শারীরিক এবং স্নায়ুতন্ত্রেরও পরীক্ষা করেন।
- রক্ত পরীক্ষা- কিডনি ফাংশান টেস্ট, প্রধানত রক্তে ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়ার মতন বর্জ পদার্থের মাত্রা পরীক্ষা করে।
- মুত্র পরীক্ষা- মুত্রের নমুনা পরীক্ষা করলে কিছু অস্বাভাবিক কারণ বেরোনোর সম্ভবনা থাকতেও পারে, যা ক্রনিক কিডনি ফেলিওরের দিকে ইঙ্গিত করতে পারে এবং একই সাথে কিডনির ক্রনিক রোগের কারণওঁ চিহ্নিত করতে পারে।
- ইমেজিং টেস্ট- কিডনির সঠিক আকার ও আকৃতি মাপার জন্য ডাক্তাররা আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করতে পারেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য ইমেজিং টেস্টও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- টেস্টের জন্য কিডনির টিস্যুর নমুনা বের করা- নির্দিষ্ট এই রোগ নির্ণয় করতে, কিডনি বায়োপসি বা কিডনির টিস্যুর বের করা হয়। চামড়া ফুটো করে কিডনির ভেতরে লম্বা ও পাতলা সূচ ঢুকিয়ে স্থানীয়ভাবে অ্যানাস্থেসিয়া করে কিডনি বায়োপসি করা হয়। কিডনির পরীক্ষা ও এর পেছনে কোন কারণ দায়ী সেটা বের করতে, বায়োপসির নমুনা তারপরে ল্যাবে পাঠানো হয়।
ক্রণিক কিডনি রোগ এর চিকিৎসা
- অধিক রক্তচাপের ওষুধ- কিডনি রোগে আক্রান্তদের অধিক রক্তচাপ হতে পারে। রক্তচাপ কমানোর জন্য ডাক্তাররা কিডনির কাজকে সুরক্ষিত রাখতে প্রচলিত ওষুধ দিতে পারেন, যেমন এসিই ইনহিবিটার বা অ্যাঞ্জিওটেন্সিন II রিসেপ্টার ব্লকার। অধিক রক্তচাপের ওষুধ প্রাথমিকভাবে কিডনির কাজ কমানোর সাথে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা বদলাতে পারে। অতএব, স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি জানবার জন্য ঘন ঘন রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। ডাক্তার এরই সাথে ডিউরাটিক ও কম-নুন যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ওষুধ- ডাক্তার কোলেস্টেরলের মাত্রা ছেঁকে কমানোর মতন ওষুধ দিতেও পারেন। ক্রনিক কিডনির রোগে আক্রান্ত্ররা অধিক পরিমাণে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
- অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার ওষুধ- নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে, ডাক্তার হরমোন এরিথ্রোপ্রোয়েটিনের সাপ্লিমেন্ট দিতেও পারে এবং অনেকক্ষেত্রে এটা অতিরিক্ত আয়রনের সাথেওঁ দিতে পারেন। এরিথ্রোপ্রোয়েটিন সাপ্লিমেন্ট আরও বেশী লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে, যা রক্তাল্পতা সংক্রান্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা কমায়।
- ফোলা কমানোর ওষুধ- ক্রনিক কিডনির রোগীরা ফ্লুয়িড ধরে রাখতেও পারে, যা থেকে পা ফোলার সাথে অধিক রক্তচাপও হতে পারে। ডিউরাটিকের মতন ওষুধ, শরীরে ফ্লুয়িদের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
- হাড়ের রক্ষা করবার ওষুধ- ডাক্তার, দুর্বল হাড় আটকাতে ও চিড় ধরার ঝুঁকি কমাতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-র সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। রক্তের মধ্যের বর্জ্য পদার্থের মাত্রা কমানোর জন্য কম প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া যেতে পারে, কারণ আমাদের শরীর খাবার থেকে প্রোটিন পায় এবং এর দ্বারা তৈরি করা বর্জ্য পদার্থ কিডনি অবশ্যই ছেঁকে বের করে দেবে। কিডনির কাজ কমানোর জন্য, ডাক্তার কম প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
- ডায়ালাইসিস- কিডনির অক্ষমতার সময়ে, ডায়ালাইসিস কৃত্রিমভাবে শরীর থেকে বর্জ্যপদার্থ ও ফ্লুয়িড বের করে দেয়। এই হেমোডায়ালিসি প্রক্রিয়ায়, একটা যন্ত্র শরীরের বর্জ্য ও ফ্লুয়িডকে ছেঁকে নেয়। পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিসে, পাতলা একটা নল (ক্যাথিতার) ডায়ালাইসিস মিশ্রণ সহ তলপেটের মধ্যে ঢোকানো হয়, যাতে বর্জ্য ও অতিরিক্ত ফ্লুয়িড শোষিত হয়। একটা সময়ের পরে, ডায়ালাইসিস মিশ্রনকে বর্জ্য পদার্থ সহ শরীর থেকে বের করে নেওয়া হয়।
- প্রতিস্থাপন- কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে শরীরে দাতার দেওয়া সুস্থ কিডনি দেওয়ার প্রক্রিয়া অন্তর্গত। ট্রান্সপ্লান্টেড কিডনি রোগীর থেকে এমনকি জীবিত ডোনারের থেকে পয়া যায়। শরীর যাতে নতুন অঙ্গকে বাতিল না করতে পারে, তাই রোগীকে আজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হয়।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
(জীবনশৈলী) লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্টঃ
ক্রণিক কিডনি রোগসহ কিডনিজনিত যে কোন রোগে সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা পেতে আজই যোগাযোগ করুন–
বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর সাবেক অধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক
ডাঃ মোঃ শফিকুল আলম
বিএইচএমএস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), পিএইচডি (ভারত)