ওরাল বা মুখের ক্যান্সার ও হোমিওপ্যাথি
মুখের ক্যান্সারঃ
মুখের যেকোন জায়গায় ক্যান্সারাস টিস্যুর বৃদ্ধি হওয়াকে ওরাল ক্যান্সার বলে এবং এটা মাউথ ক্যান্সার নামেও পরিচিত। ওরাল ক্যান্সার সাধারণত ঠোঁটের আস্তরণ এবং মুখের ভেতরে্র স্কোয়ামাস কোষে হয়। এটা স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা নামেও পরিচিত। ঠোঁট, গলা, গাল, মুখের ভেতরের নীচের দিকে ও ওপর, মাড়ি, জিভ এবং সাইনাসের ক্যান্সার এর অন্তর্গত। প্রাথমিক ধাপে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে ওরাল ক্যান্সার প্রাণঘাতীও হতে পারে।
Table of Contents
মুখের ক্যান্সারের কারণঃ
ঠোট বা মুখ গহবরের টিস্যু বা কোষের ডিএনএ এর অনিয়ন্ত্রিত পরিবর্তনের ফলে মুখে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্যান্সার মুখগহবরের ভিতরে পাতলা আবরনী টিস্যু বা স্কোয়ামাস কোষগুলোতে যেমন ঠোটের ধার বা মুখের সমতল অংশে প্রথম তৈরী হয়ে থাকে। এজন্যে মুখের ক্যান্সারকে স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা বলা হয়ে থাকে। সাধারনত মহিলাদের তুলনায় পুরুষের এই ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে এবং বয়স হিসেবে সাধারনত ৪০ বছরের উপরের ব্যক্তিদের এই ক্যান্সার হয়ে থাকে।
যদিও মুখের ক্যান্সার সৃষ্টির সঠিক কারণ এখনো অজানা তারপরেও কিছু কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ বা ফ্যাক্টর কে কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যেমনঃ
- প্রতিদিন তামাক সেবন যেমনঃ সিগারেট, সিগার, পাইপ বা মদ্যপানজনিত অভ্যাস। এমনকি নিয়মিত পানপাতা ও সুপারি চিবালেও মুখের ক্যান্সারের ঝুকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
- অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে থাকলে ঠোটের ক্যান্সারের ঝুকি বেড়ে যায়।
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি সংক্রমণ থাকলে।
- মুখ বা মাথা বা ঘাড়ের ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে।
- কোন ধরণের ক্ষতিকর রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকলে।
- ত্রূটিপূর্ণ ডেন্টাল ম্যানেজমেন্ট হলে।
মুখের ক্যান্সারের লক্ষণঃ
মুখের ক্যান্সারের প্রথম অবস্থায় সাধারনত খুব সামান্য পরিমাণ লক্ষণ থাকে এবং প্রায় সময়ই মুখের ভিতরে এক ধরণের ক্ষত ভাব অনুভব করে থাকে। তবে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যেমনঃ
- মুখ গহবরের ভিতরে কোন মাংসপিন্ড বা টিউমারের লক্ষণ দেখা দিলে।
- মুখ গহবরের ভিতরে বা পর্দায় ৩ সপ্তাহ বা এর বেশী সময় ধরে সাদা বা লালচে দাগ।
- ১ মাসের বেশী সময় ধরে গলায় ব্যাথার স্থায়ী থাকলে এবং খাবার গলঃধকরন করতে কষ্ট হওয়া।
- মুখের ক্ষত বা আলসার হওয়া যা ১ মাসের বেশী সময় ধরে স্থায়ী থাকে বা নিরাময় করা যায় না।
- কোন কারণ ছাড়াই দাঁত আলগা হয়ে যাওয়া বা দাঁত পড়তে থাকা।
- কন্ঠস্বর বা আওয়াজ এ হঠাৎ কর্কশভাব বা ঘোড়ার মতন হওয়া বা গলার আওয়াজ হারানোর মতো হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া।
- কোন কারণ ছাড়া মুখ থেকে রক্ত পড়া।
- কানে ব্যাথার যা সহজে কমে না বা নিরাময় হয়না এবং অনেকদিন যাবত স্থায়ী হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ঃ
প্রথম অবস্থায় মুখের ক্যান্সারের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ থাকে না, তবে উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার মুখের পরীক্ষা করার সময়ে লাল বা সাদা দাগ আছে কি না, মুখ গহবরে কোন ধরনের টিউমার, লাম্প বা কোন ধরনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি আছে কি না সেটা লক্ষ্য করে থাকেন। এরপরে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে বায়োপসি করা হয়। মুখের ক্যান্সার পাওয়া গেলে পরবর্তীতে নিম্নোক্ত পরীক্ষা বা টেস্টের মাধ্যমে ক্যান্সারের স্টেজ নির্ণয় করা হয়ে থাকে-
১. এন্ডোসকপি।
২. এক্স-রে।
৩. এম আর আই।
৫. পি ই টি- পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি।
মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ
প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রধানত ক্যান্সার কোথায় হয়েছে এবং কোন ধাপে আছে সেটার ওপর নির্ভরশীল।
- সার্জারি
- রেডিয়েশান থেরাপি
- কেমোথেরাপি
- টারগেটেড ড্রাগ থেরাপি
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ হোমিওপ্যাথি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি হওয়ায়, রোগীর সামগ্রীক লক্ষণ ও রোগলক্ষণ সংগ্রহ করে উপযুক্ত ওষুধ এবং সঠিক মাত্রা ও সঠিক ডোজ নির্বাচন করলে কোন ধরনের সার্জারী ছাড়াই ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বিভিন্ন লক্ষণ সাপেক্ষে মুখের ক্যান্সারের উপর হোমিওপ্যাথিতে প্রায় ৩৫টি ওষুধ রয়েছে। রোগীর রোগলক্ষণ বিবেচনা করে ওষুধগুলো নির্বাচন করা হয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মেডিসিনগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- Psornum
- Thuja
- Syphilinum
- Medorrhinum
- Arsenic Album
- Kali Cyanoid
- Lachesis
- Aurum Met
- Kali Bichrome
- Condurango
- Echnesia
- Hydrastis Can
- Arsenic Iod
- Crotalus Hor
- Merc sol
- Merc Cor
- Ruta Grav
- Causticum
- Borax
- Carcinosin
- Lycopodium
- Carbo Veg
ক্যান্সারসহ যে কোন জটিল রোগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত ও সরকারি রেজিষ্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
Sorry, the comment form is closed at this time.