পাকস্থলী ক্যান্সার হলে কীভাবে বুঝবেন?
পাকস্থলী ক্যান্সার এর হার বর্তমানে খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। সাধারনত এর লক্ষণ প্রথমে প্রকাশ পায় না বা প্রকাশের ভঙ্গি অনেকটা গ্যাস্ট্রিক বা সাধারণ সমস্যার মতো হয়। এতে শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যায়।
পাকস্থলী খাদ্য হজম করে। এরপর পাচনতন্ত্রের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রে পাঠায়। যখন পাকস্থলীর মধ্যকার বা দেয়ালের স্বাস্থ্যকর কোষগুলো নিজেদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এবং ক্যান্সার এ পরিণত হয়, তখন টিউমার তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ধীরে ধীরে ঘটে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার বহু বছর ধরে বাড়ে। সাধারণত পঞ্চাশ থেকে ষাটোর্ধ্ব মানুষকে এ ধরনের ক্যান্সার এ আক্রান্ত হতে দেখা যায়। নারীর তুলনায় পুরুষ পাকস্থলী ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করা হলে পাকস্থলী বা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে পাশের অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে খাদ্যনালী, লিভার ও পেটের অভ্যন্তরের অন্যান্য অংশে ছড়ায়।
Table of Contents
পাকস্থলী ক্যান্সারের পর্যায়গুলো কি?
- প্রথম পর্যায়: প্রথম পর্যায়ে পেটের অভ্যন্তরীণ আস্তরণে ক্যান্সার উপস্থিত থাকে।
- দ্বিতীয় পর্যায়: এই পর্যায়ে ক্যান্সারটি পেট এবং নিকটবর্তী লিম্ফ এবং পাকস্থলীর গভীর স্তরগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
- তৃতীয় পর্যায় : এই পর্যায়ে ক্যান্সার পাকস্থলীর সমস্ত স্তরগুলির পাশাপাশি প্লীহা বা কোলনের মতো কাছের অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
- চতুর্থ পর্যায় : এই পর্যায়ে ক্যান্সার যকৃত, ফুসফুস বা মস্তিষ্কের মতো অঙ্গগুলিতে অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।
পাকস্থলী ক্যান্সার এর কারণ কি?
পাকস্থলী ক্যানসারের কয়েকটি ধরন রয়েছে। অ্যাডেনোকার্সিনোমা, লিম্ফোমা, কার্সিনয়েড টিউমার। পাকস্থলীতে ক্যানসার কোষের বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, পাচনতন্ত্রের অন্যান্য অংশে টিউমার, পাকস্থলীর পলিপস, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জেনেটিক সিনড্রোম যেমন লিঞ্চ সিনড্রোম ও লি-ফ্রোমেনি সিনড্রোম। এ ছাড়া তামাক বা ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন, খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এবং ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া।
কোন কোন খাবারে পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে?
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার, শুঁটকি মাছ, লবণে সংরক্ষিত মাছ-মাংস, আচার বা চাটনিযুক্ত খাবার,অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, লাল মাংস ইত্যাদি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- রেফ্রিজারেটরে রাখা খাবারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস কম জন্মায় এবং এসব জীবাণু থেকে যেসব কেমিক্যাল ক্যান্সার তৈরি করে সেগুলো কম তৈরি হয়। সে জন্য রেফ্রিজারেটরে রাখা খাবার পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
পাকস্থলী ক্যান্সার এর লক্ষণগুলো কি কি?
প্রাথমিক পর্যায়ে পাকস্থলীর ক্যান্সার লক্ষণহীনভাবে থাকতে পারে। তবে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
- পেটের উপরিভাগে ব্যথা ও চাকা অনুভব করা।
- পেটে পানি জমে ফুলে যাওয়া।
- হঠাৎ শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া।
- হালকা বমি বমিভাব, ক্ষুধামন্দা ও পেটে জ্বালাপোড়া করা।
- চোখ ও ত্বক হলুদ হওয়া বা জন্ডিস।
- খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া।
- শরীরে জ্বর জ্বর ভাব অনুভব হওয়া।
- গুরুতর লক্ষণ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া ও রক্তবমি হওয়া।
পাকস্থলী ক্যান্সার নির্ণয় করতে কী কী পরীক্ষা করতে হয়?
এই ধরণের ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষা এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ
- আপার এবডোমিনাল এন্ডোসকপি (Upper Abdominal Endoscopy)
- ব্যারিয়াম মিল এক্সরে (Barrium Meal X-ray)
- বায়োপসি (Biopsy)
- রক্ত পরীক্ষা (Blood Test)
পাকস্থলী ক্যান্সার এর ক্ষেত্রে কি ধরণের চিকিৎসা দেওয়া হয়?
প্রচলিত চিকিৎসায় অবস্থা বুঝে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। টিউমার বৃদ্ধি ও আকারের ওপর নির্ভর করে পাকস্থলীর একটি অংশ বা পুরোটা সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে ফেলার দরকার হতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন সাধারণত সার্জারির পাশাপাশি চলতে থাকে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় ওষুধ নির্বাচন করা হয়। সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা হলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণসহ টিউমার ও অন্যান্য শারীরিক লক্ষণাদি নির্মুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ রোগীভেদে পাকস্থলী ক্যান্সারের উপরে ধাপে ধাপে প্রায় ২২-২৫ টির মত হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন ব্যাবহৃত হতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু মেডিসিন হচ্ছে- Conium Mac, Arsenic Album, Thuja, Condurango, Bismuth met, Graphites, Carbo Ani, Lachesis, Hydrastis can, Orninthogalum, Phytolacca, Lycopodium, Carbo veg, Phosphorus ইত্যাদি।
পাকস্থলী ক্যান্সার কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
- জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো যায়। নিজেকে ফিট রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত।
- প্রতিদিনের খাবারে বেশি করে ফল ও শাকসবজি রাখা।
- অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার ও ভাজাপোড়া না খাওয়া।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল বাদ দেওয়া।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়া।
- খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও রান্না করে খাওয়া।
- নিজে নিজে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা গ্রহণ করলে প্রতিরোধ সম্ভব। তবে অবশ্যই একজন সরকারি রেজিস্টার্ড ও অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ডাঃ মোঃ শফিকুল আলম
বিএইচএমএস(ঢাবি), পিএইচডি (ভারত)
সাবেক অধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক-মেডিসিন বিভাগ
সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুর-১৪, ঢাকা
Sorry, the comment form is closed at this time.