সোরিয়াসিস
সোরিয়াসিস একটি ক্রনিক বা পুরাতন চর্মরোগ। রোগীদের মাঝে সাধারনত যে সকল চর্মরোগ দেখা যায় তার মধ্যে সোরিয়াসিস প্রধান। সোরিয়াসিস এমন একটি ক্রনিক রোগ যা বারবার চক্রাকারে ফিরে আসে। এটি অটোইমিউন রোগ বলে সহজে ভালো হয় না। তবে লাইফস্টাইল পরিবর্তন ও নিয়মিত ঔষধ সেবন করলে অনেকেই এই রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকে।
প্রকারভেদঃ
আক্রান্ত স্থানে ও লক্ষণের উপর ভিত্তি করে সোরিয়াসিস বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যেমনঃ
- প্লাক সোরিয়াসিসঃ এটি ত্বকের যেকোন যায়গায় হতে পারে এবং এটিই সব থেকে বেশি হয়ে থাকে।
- নেইল সোরিয়াসিসঃ সাধারণত নখের প্রান্তে হয়ে থাকে।
- গাটেট সোরিয়াসিসঃ এটি প্রধানত শিশু কিশোরদের বুক, গলা ও মাথায় হয়ে থাকে।
- ইনভার্স সোরিয়াসিসঃ চামড়ার বিভিন্ন ভাজে সাধারণত এই প্রকারের সোরিয়াসিস হয়ে থাকে।
- পাস্টুলার সোরিয়াসিসঃ এটি সাধারনত শরীরে বড় একটি অংশ জুরে ছোট ছোট পুজ যুক্ত উদ্ভেদ উৎপন্ন করে, সাথে জ্বর ও ব্যাথা থাকতে পারে।
- সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসঃ চর্মে উদ্ভেদের সাথে সাথে অনেক সময় বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথা হতে থাকে। পরবর্তিতে এটা আর্থ্রাইটিসে রুপ নেয়।
সোরিয়াসিসের কারণঃ
সোরিয়াসিস কিভাবে হয় তা এখনো বিজ্ঞানীরা পরিস্কারভাবে বলতে পারেন নি। তবে এটি অটোইমিউন ডিজিজ বলে, শরীরে অবস্থিত টি-সেল (যা ফরেন বডির বিরুদ্ধে কাজ করে) শরীরের বিভিন্ন কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে, ফলে অতিরিক্ত কোষ তৈরী হয়ে তা সোরিয়াসিসে রুপ নেয়। সোরিয়াসিসের সম্ভব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
- পারিবারিক সোরিয়াসিসের ইতিহাস থাকা।
- ত্বকে ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশান হওয়া।
- মানসিক চাপ।
- ধূমপান করা।
- চর্মে বিভিন্ন প্রাকারের আঘাত পাওয়া।
- ভিটামিন ডি স্বল্পতা ইত্যাদি।
সোরিয়াসিসের লক্ষনঃ
সোরিয়াসিসের রোগ লক্ষন একেক রোগীর মধ্যে একেক রকম হতে পারে। এর মধ্যে কমন যে সিম্পটমস গুলো পাওয়া যায় তাহলঃ
- লাল রঙের ফুস্কুরি যা রুপালী রঙের চটা/মামড়ী দিয়ে আবৃত থাকে।
- ছোট ছোট মামড়ীযুক্ত উদ্ভেদ।
- শুষ্ক, ফাটা ত্বক যা থেকে রক্তপাত হয়।
- চুলকানী, জ্বালা ও ক্ষত।
- নখের অগ্রভাগ মোটা, ভাজ বা বসে যাওয়া।
- শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে ব্যাথা হওয়া।
জটিলতাঃ
সোরিয়াসিস থেকে বিভিন্ন প্রকারের জটিল রোগ হতে পারে, যেমনঃ
- সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস
- চোখের বিভিন্ন সমস্যা
- দেহের স্থুলতা
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপ
- কিডনীর বিভিন্ন প্রাকার রোগ ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়ঃ
সাধারণত চর্ম পর্যবেক্ষণ করেই সোরিয়াসিস ডায়াগনোসিস করা হয়, এছাড়া
- ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন ও মেডিকেল হিস্টোরি নেওয়া
- স্কিন বায়োপসি করেও রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা-
সাধারণ ম্যানেজমেন্টঃ
সোরিয়াসিস থেকে মুক্তি পেতে হলে লাইফস্টাইল পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু ম্যানেজমেন্ট পালন করতে হবে, যেমনঃ
- ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম/লোশান (আর্দ্রতাকারক) ব্যবহার করা।
- ধূমপান পরিহার করা।
- মানুষিক চাপমুক্ত থাকা।
- ফিস অয়েল ব্যবহার করা।
- সর্বদা ত্বক পরিস্কার রাখা।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা-
সোরিয়াসিস যদিও সম্পূর্ণ ভালো হওয়া একটু কঠিন তবে অভিজ্ঞ ও উচ্চশিক্ষিত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের নিকট নিয়মিত চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি সকল ম্যানেজমেন্ট সঠিক মতো মেনে চললে সোরিয়াসিস নামক এই পুরাতন রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।